পৃষ্ঠাসমূহ

সম্পাদকীয় ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০০৯



মানব অস্তিত্বের ‘অনন্যতা’ কী? ‘মানুষ’ যদি পশুরই এক পদের নাম বলে কেউ মনে করেন, তবে তাকে ভিন্ন অন্যদের পুঁছি, মানুষের ‘অনন্যতা’ কী? মানুষ গান গাইতে পারে, পশু পারে না; মানুষ নাটকের সংলাপ মুখস্ত বলতে পারে, পশুর মুখস্ত বিদ্যা নেই; মানুষ ছবি আঁকে, পশু আঁকে না- এই কি মানুষের অনন্যতা? মানুষের অনন্যতা হলো- সে শিল্পী, সে তার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে শিল্প ফুটিয়ে তুলতে পারে। আর গান, নাটক, কবিতা কিংবা চিত্রকলা নিছক সেই শিল্পকে প্রকাশের বাহন বৈ ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু সকলেই তো স্বীয় কাজে শিল্পের প্রকাশ ঘটাতে পারেন না, কিছু কিছু মানুষ পারেন। আবার সবাই সেই শিল্পকে দেখতেও পান না। তাই শিল্পী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তিনি সাধারণের মধ্যে থেকেও তার দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা ও মননের কারণে সবার থেকে অসাধারণ। মানুষের দৈনন্দিন কাজগুলোর মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ শিল্পের জন্ম নেয়। শিল্পীর দৃষ্টিটা কেমন? 
.
অগুনতি মাথা দেখে আমি বলি কালো 
তুমি বলো দূরে দেখো চিল  
ডানা মেলা চিল, দেখো কালো ডানা চিল 
আকাশে ভাসে চিল। 
.
শিল্পীর দৃষ্টিটা মনে হয় এ রকম। তবে অবশ্যই তা অনর্থক ব্যাঙের মধ্যে সাপের অস্তিত্ব খুঁজে দেখার দৃষ্টি নয়। সৃজনশীল কোন কিছুই অহেতুক অনর্থক হতে পারে কি? প্রশ্নটা নিজেদের জন্য করে রাখলাম। আবার মানুষের সকল সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে কি শিল্প বলা যায়? সিগারেট কোম্পানীর স্পন্সরে যখন আমরা মুক্ত, আমরা স্বাধীন, আমরা স্মাটর্, আমরা ধূমপান করি না টাইপের সঙ্গীত রচিত হয়, সৃজনশীলতা এবং নন্দনের মাপকাঠিতে তা যতই উৎরে যাক, তাকে ঠিক কোন অর্থে শিল্প বলা যায়? আমরা তাকে শিল্প বলতে নারাজ। একে সর্বোচ্চ একটা উৎকৃষ্ট ঠাট্টা বলা যেতে পারে।  
.
শিল্প প্রসঙ্গে আমাদের ভাবনাগুলো এভাবেই পথ খুঁজে পাচ্ছে। এ সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাগুলো শিল্প সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ করছে না, বরং শিল্প নিয়ে আমাদের নিরন্তর জিজ্ঞাসার যাত্রা মাত্র। লোকযাত্রার পরবর্তী সংখ্যাগুলোতেও আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার ইচ্ছা পোষণ করি। 
.
বিনীত 
মাসউদুর রহমান 
সাইফ শাওন 
ডিসেম্বর ২০০৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন