পৃষ্ঠাসমূহ

শিল্পঃ ক্ষুদ্রের জিজ্ঞাসা - ২

শিল্পঃ ক্ষুদ্রের জিজ্ঞাসা - ২ 
আসবাবীর রাফসান 
.
শিল্পাঙ্গনের এক ক্ষুদ্র কর্মী আমি। চর্চা করতে এসে নিজের ভেতর নানা প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছি। কি করছি? কেন করছি? এই প্রশ্ন স্বভাবতই এসে যায়। 
এ লেখায় তেমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার কিছু প্রশ্নই রয়ে গেছে। কি করছি, এই প্রশ্নের একটা উত্তর হতে পারে শিল্পচর্চা করছি। এখানেই প্রশ্নগুলোর অবতারণা। শিল্প কি বা কাকে বলে?  
.
যিনি শিল্প সৃষ্টি করেন তিনি শিল্পী। ব্যক্তি যখন কোন বিষয়ে ভাবিত হন এবং তার ভেতরে কিছু করার তাড়না অনুভব করেন, তখন ভাবনা-ক্রিয়ায় চেতনার জন্ম। চেতনা থেকে যা সৃষ্টি হয় তাই শিল্প। চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিল্পে। তাই শিল্প মাত্রই উদ্দীপক। কিন্তু সকল উদ্দীপকই শিল্প কি? ব্যক্তি যখন কোন বিষয়ে ভাবিত হন এবং কিছু করার তাড়না অনুভব করেন তখন তার মাঝে শিল্পী-সত্ত্বার জন্ম নেয়। এই সত্ত্বা তাকে সৃষ্টির তাগাদা দেয়। ব্যক্তি-সত্ত্বা হতে এই শিল্পী-সত্ত্বা আলাদা। শিল্পী-সত্ত্বার প্রকাশে ব্যক্তিগত ভাল লাগা খারাপ লাগা আসলেও আসতে পারে, কিন্তু সেখানে ব্যক্তিগত লাভালাভ বা মোহ কাজ করলে শিল্প সৃষ্টি হতে পারে না। শিল্প সব সময় সামগ্রিক কল্যাণ ও সামষ্টিক বিষয় নিয়ে প্রবাহিত, তাই ব্যক্তিগত উদ্দীপকীয় বিষয়গুলো শিল্প হতে পারে না। ব্যক্তি অসৎ হলেও হতে পারেন। কিন্তু তার শিল্প-সত্ত্বা কখনোই অসৎ-অসত্য কথা বলতে পারে না। শিল্প অকল্যাণ ও বিশৃঙ্খলাকে রোধ করে। যা অকল্যাণ বয়ে আনে এবং বিশৃঙ্খলা তৈরী করে তা কি শিল্প হতে পারে? নিশ্চয় নয়। শিল্প সৃষ্টি তাই পূর্ণ মনোযোগ এবং আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আদ্যোপান্ত, পক্ষে বিপক্ষে সকল বিষয়াবলী বিচার-বিশ্লেষণ করেই হওয়া উচিৎ। এরপরও শিল্পীর ভুল হয়েও যেতে পারে। তার সেই ভুল শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব অপরাপর শিল্পীদের। অপর শিল্পী তার সমালোচনা করবেন। ভুল ধরিয়ে দেবেন অবশ্যই শৈল্পিক কায়দায়। পারস্পরিক সমালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও শিল্পীদের হৃদ্যতার মাধ্যমেই শিল্প এগিয়ে যেতে পারে।
.
এবার আসা যাক শিল্পের উৎসে। শিল্পের উৎস কি? একটা কথা শোনা যায়, “ভেতর থেকে কর, ভেতর থেকে না করলে হবে না” বা “উনি/অমুক একেবারে ভেতর থেকে কাজটা করেছেন”। কেন ‘ভেতর’ এর কথা বলা হয়? কি আছে ওখানে?  
.
আমরা মানুষ, প্রতিনিয়ত শুনছি, দেখছি। গাছ, নদী, পাখি, আকাশ, পাহাড়, সাগর, চাঁদ, সুর্য এগুলো মানুষের ভেতর আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিল্পী এখান থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান। তাহলে প্রকৃতিই কি শিল্পের উৎস? আবার একটা গাছ, পাহাড় তাতেও তো যেন কোন শিল্পীর ছোঁয়া। তাহলে প্রকৃতি নিজেই কি একটা শিল্প? হলে, এ শিল্পের স্রষ্টাও আছেন। নিশ্চয়। আবার একই বিষয়ে, অন্য প্রসঙ্গে, ‘পণ্যের বিজ্ঞাপণ’, এতেও তো বহু সৃজনশীলতা দেখা যায়, পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অনুভূতি কাজ করে, হোক না তা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যকে সফল করার এই চর্চাকে কি আমরা শিল্প বলবো? নাকি শিল্পের স্তরভাগ-প্রকারভেদ করে এই চর্চার নাম দেব ‘বাণিজ্যিক শিল্প’? শিল্পের কি বাণিজ্যিকীকরণ হতে পারে বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কৃত কর্মকে কি শিল্প বলা যায়?  
.
কেন শিল্পচর্চা? শিল্পের প্রচারের জন্যে শিল্পচর্চা? নাকি চেতনা প্রচারের জন্যে শিল্পচর্চা? এমন কিছু যা নান্দনিক কিন্তু বোধগম্য নয় তা কি শিল্প? একজন শিল্পী নিশ্চয় অন্য দশ জন মানুষ হতে ভিন্ন, তাই তার শিল্পের চর্চা-প্রয়োগ এমন হওয়াই উচিৎ নয় কি যা সকলের উপকারার্থে আসে?
.
পরিশেষে নিবেদন, দীর্ঘ কথায় অনেকগুলো কি, কেন'’তে আপনাদের কর্মকান্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু কাস্তে হাতে খড় কাটতে গেলে কোনরূপ কেন’র সম্মুখীন হতে না হলেও শিল্প নিয়ে খেলতে এসে এই সকল কি, কেন’র উত্তর বের করা আমার অবশ্য কর্তব্য বলে মনে হয়েছে। এ জন্যই এই যাত্রা এবং তা অব্যাহত থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন